- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
“বিশ্ব-প্রবাহের মূলে এক অমোঘ শক্তির অস্তিত্ব তিনি অনুভব করেছেন, যা একান্তরূপে বিনাশক, ক্রুর এবং কদর্য।”
- ভূদেব চৌধুরী
‘তোমার গল্পে নূতন রূপ ও রস দেখিয়া খুশি হইলাম।’
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘জগদীশ গুপ্ত আগাগোড়া তিক্ত, রুক্ষ ও নৈরাশ্যবাদী। তাঁর লেখা পড়লে আমাদের মূল্যবোধগুলি প্রচণ্ডভাবে নাড়া খায় এবং আমরা স্বভাবতই অস্বস্তিবোধ করি।’
- সুবীর রায়চৌধুরী
“জগদীশ গুপ্ত কোনোদিন কল্লোল–অফিসে আসেননি। মফসসল শহরে থাকতেন, সেখানেই থেকেছেন স্বনিষ্ঠায়। লোক-কোলাহলের মধ্যে এসে সাফল্যের সার্টিফিকেট খোঁজেননি। সাহিত্যকে ভালোবেসেছেন প্রাণ দিয়ে। প্রাণ দিয়ে সাহিত্যরচনা করেছেন। অনেকের কাছেই তিনি অদেখা, হয়তো বা অনুপস্থিত।”
- অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
“মানুষ হিসেবে উনি ছিলেন অত্যন্ত চাপা, অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ, আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রচণ্ড তীব্র। অত্যন্ত কম কথা বলতেন। তবে হঠাৎ করে এমন একটা কড়া কথা অথবা এমন একটা রসিকতা করতেন যেটা আমাদের কাছে কিছুটা আশ্চর্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াত।
ধর্মীয় ব্যাপারে তিনি বেশ উদাসীন ছিলেন। কোনওরকম কুসংস্কার ওঁর মধ্যে দেখিনি। এমনকি ঠাকুর দেবতার সম্পর্কেও ওঁর কোন বাড়াবাড়ি দেখি নি।”
- চারুবালা গুপ্ত
“জগদীশ গুপ্ত কল্লোলের কালবর্তী এবং সঙ্গে সঙ্গে একথাও সত্য যে কল্লোলের যা মূল বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত ছিল তা একমাত্র জগদীশ গুপ্তের রচনাতেই অভিব্যক্ত।”
- সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
জগদীশ গুপ্ত (জন্ম জুন, ১৮৮৬ – মৃত্যু ১৫ এপ্রিল, ১৯৫৭) ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার ছিলেন। তিনি মূলত কথাসাহিত্যিক হলেও সাহিত্যিক জীবনের শুরুতে কবিতা লিখেছেন ও একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছেন।
তাঁর পৈতৃকনিবাস ফরিদপুর জেলার খোর্দ মেঘচারমি গ্রামে। পিতা কৈলাশচন্দ্র গুপ্ত কুষ্টিয়া আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন। ১৯০৫ সালে কলকাতা সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। অতঃপর কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৭ সালে এফ. এ পরীক্ষা দিয়ে কলেজের পাঠ ত্যাগ করেন।পরবর্তীতে কলকাতা কমার্শিয়াল ইন্সটিটিউট থেকে শর্টহ্যান্ড ও টাইপরাইটিং শিক্ষা গ্রহণ করেন।
বীরভূম জেলার সিউড়ি জজকোর্টে টাইপিস্টের চাকুরি লাভ করেন ১৯০৮ সালে। সেখানে ৪/৫ বছর চাকুরীর করার পর উড়িষ্যার সম্বলপুরে একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের অফিসে পুণরায় টাইপিস্টের চাকুরী গ্রহণ করেন ১৯১৩ সালে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটায় চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন তিনি। অতঃপর কলকাতার "জাগো'স ইঙ্ক" নামের ফাউন্টেনপেনের কালি তৈরীর একটি কারখানা খোলেন। এ ব্যবসায় উন্নতি করতে না পেরে ১৯২৭ সালে বোলপুরের চৌকি আদালতে আবারো টাইপিস্টের চাকুরীতে যোগদান করেন। সেখানে একটানা ১৭ বছর চাকুরীর করার পর ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কুষ্টিয়ায় বাস করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর কুষ্টিয়া ত্যাগ করে কলকাতায় গমন করেন ও সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
কবি হিসেবে তিনি প্রথমে আত্মপ্রকাশ করলেও ছোট গল্পকার-রূপে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেন। 'বিজলী', 'কালিকলম', 'কল্লোল' প্রভৃতি সেকালের নূতন ধরনের সকল পত্রিকাতেই গল্প প্রকাশ করেছেন। গল্প ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে প্রকাশভঙ্গির স্বাতন্ত্র্যের জন্য সাহিত্যিক মহলে বিশিষ্ট স্থান পেয়েছিলেন।
ছোটগল্পের বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন জগদীশ গুপ্ত। গভীর জীবনবোধ, সুঠাম কাহিনীবিন্যাস ও চরিত্রচিত্রণের নৈপুণ্যে তাঁর ছোটগল্প সমৃদ্ধ হয়েছে। মনোবৈকল্য ও মনোবিশ্লেষণ এবং দুঃখময়তার নিপুণ বর্ণনায় তাঁর শিল্পকর্ম এক অসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সামাজিক অন্যায়-অবিচারের চেয়ে অদৃষ্টলিপিই দুঃখময়তার কারণ বলে তাঁর গল্পে বিশ্লেষিত।
গল্পগ্রন্থ
বিনোদিনী (১৩৩৪); রূপের বাহিরে (১৩৩৬); শ্রীমতি (১৩৩৭); উদয়লেখা (১৩৩৯); শশাঙ্ক কবিরাজের স্ত্রী (১৩৪১); মেঘাবৃত অশনি (১৩৫৪); স্বনির্বাচিত গল্প (১৩৫৭)
উপন্যাস
অসাধু সিদ্ধার্থ (১৩৩৬); লঘুগুরু; দুলালের দোলা (১৩৩৮); নিষেধের পটভূমিকায় (১৩৫৯); কলঙ্কিত তীর্থ (১৩৬৭)
কবিতা-সঙ্কলন: অক্ষরা