আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলা শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে একটা সময় এই অঞ্চল ‘গৌড়’ নামেও পরিচিত ছিল। বাংলা উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, শশাঙ্ক প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোকে গৌড় নামে একত্রিত করেন। পাণিনির গ্রন্থে সর্বপ্রথম এবং কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে গৌড় জনপদের শিল্প ও কৃষিজাত দ্রব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। হর্ষবর্ধনের শিলালিপি হতে প্রমাণিত হয় যে, সমুদ্র উপকূল হতে গৌড় দেশ খুব বেশি দূরে ছিল না। সাত শতকে গৌড়রাজ শশাঙ্কের রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া ভারতের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানের কিছু অংশকে গৌড়ের সীমানা মনে করা হয়।
ঐতিহাসিক এই জনপদ থেকেই ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জেলার অন্যান্য পত্রিকার ভিড়ে পথচলা শুরু করে দৈনিক গৌড় বাংলা। সময়ের হিসাবে আজ শনিবার গৌড় বাংলা ধাপ ফেলল অর্ধযুগে অর্থাৎ ষষ্ঠ বছরে। কেবলই মনে হয়, এই তো সেদিন প্রকাশ হলো গৌড় বাংলা। সন্তানের বয়স যতই হোক না কেন- মা-বাবার কাছে সে সর্বদাই শিশু। হয়তো সে জায়গা থেকে আমার এ মনে হওয়ার কারণ।
গৌড় বাংলা চাঁপাইনবাবগঞ্জকেন্দ্রিক অনেক বিষয়ই তুলে ধরেছে। এখানকার সমস্যা-সম্ভাবনা, দাবি-দাওয়া; বলা যেতে পারে জেলার কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছে গৌড় বাংলা। আমরা চেষ্টা করেছি সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকার। তাদের আশা-নিরাশা-সমস্যা-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছি। জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোটখাটো অনেক ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরতেও প্রয়াস ছিল আমাদের। বাদ যায়নি, এখানকার সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা কিংবা খেলাধুলার খবরগুলোও। তবে এসব বিষয় তুলে ধরতে আমাদের ঘাটতি থাকতে পারে; কিন্তু চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল না। আমরা কতটুকু পেরেছি, তার মূল্যায়ন পাঠকের কাছেই। শুধু আশাবাদ ব্যক্ত করে বলতে পারি, আমাদের এ চলার ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।
গৌড় বাংলার চেষ্টা থাকে সবকিছুর সঙ্গে নবীনদের সংমিশ্রণ; বিশেষত শিক্ষার্থীদের। সে জায়গা থেকে গতবছর আমরা সাহিত্য পাতায় শুরু করেছি স্কুল শিক্ষার্থীদের লেখা প্রকাশের। এক্ষেত্রে সাড়াও পেয়েছি। আর তাই তো গতবছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে সম্পাদকীয় পৃষ্ঠাটি আমরা স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করেছিলাম। উদ্দেশ্য, পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি তাদের মধ্যে অন্যসব বই পড়ার চর্চা তৈরি করা এবং সৃষ্টিশীল লেখনী তৈরিতে তাদের উদ্বুদ্ধ করা। আমাদের সে আয়োজন পাঠকসমাদৃত হয়েছিল, এ কথা বলতেই পারি।
ষষ্ঠ বর্ষে আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী বিশেষ করে যারা কলেজে অধ্যয়নরত তাদের মধ্যে সাংবাদিকতা শেখার দ্বার উন্মোচন করা (পত্রিকায় এ সংক্রান্ত ঘোষণা শিগগিরই দেয়া হবে বলে আশা করছি)। যেন তিনি অধ্যয়নকালীন সাংবাদিকতা শিখে ভবিষ্যতে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। যারা শিখতে চান, তাদেরকে স্বাগত।