আসলেম থেকেই মুসলিম শব্দের উৎপত্তি। আসলেম বা আত্মসমর্পণকারীকে মুসলিম বলে। সমর্পণের ধর্মের নাম ইসলাম। নবী ও রসুলগণের নিকট আত্মসর্পণের নাম ইসলাম। আদম হইতে আজ পর্যন্ত যত নবী ও রসুল আসিয়াছেন সকলেই ইসলাম প্রচার করিয়া গিয়াছেন। কাজেই দেখা যায় সকল ধর্মই ইসলাম ধর্ম। কোরানে আছে এমন কোন কাওম বা জাতি নাই; যেখানে নবী ও রসুল পাঠানো হয় নাই। যে ব্যক্তি ঈসা (আ.) এঁর কাছে সমর্পণ করিয়াছেন তিনি ঈসাই মুসলিম। যিনি মুসা (আ.) এঁর কাছে সমর্পণ করিয়াছেন তিনি মুসাই মুসলিম। যিনি বুদ্ধ (আ.) এঁর কাছে সমর্পণ করিয়াছেন তিনি বুদ্ধিষ্ট মুসলিম। যিনি কৃষ্ণ (আ.) এঁর কাছে সমর্পণ করিয়াছেন তিনি কৃষ্ণের মুসলিম। যিনি মোহাম্মদুর রসুলাল্লাহ (আ.) এঁর কাছে সমর্পণ করিয়াছেন তিনি মোহাম্মদী মুসলিম। অতএব প্রশ্ন থাকে যে, মুসলিম নয় কে? যুগে যুগে আল্লাহ নবী ও রসুলের মাধ্যমে মানুষের নিকট আত্মসমর্পণের ধর্ম প্রচার করিয়া চলিয়াছেন। আল্লাহর প্রচারিত যে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করিলেই তাহাকে আল্লাহ মুক্তি দিতে বাধ্য। আর আল্লাহকে যদি এমেন্ডমেন্ট (তথা পরিবর্তনের) অধীন করিয়া লওয়া হয় তাহা হইলে আল্লাহর আল্লাহিয়াত থাকে না। আল্লাহও আমাদের মত ভুল-ত্রুটির অধীন হইয়া পড়েন। সে ক্ষেত্রে এমন আল্লাহকে আল্লাহ বলিয়া মানা কঠিন হইয়া পড়ে। আল্লাহ তাঁহার বিধান যুগপোযোগী করার জন্য সর্বকালে নবী ও রসুলগণের মাধ্যমে বিধান পরিবর্তন করিয়া আসিতেছেন। কিন্তু তাঁহার মূল আত্মসমর্পণের ধর্ম, ‘এক ও অভিন্ন’। সময়ের বিবর্তনে যে সকল ভুল-ত্রুটি ধর্মের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িয়াছে সেগুলোকে একটু সচেতন দৃষ্টিতে দেখিলে সহজেই এর ভুল-ভ্রান্তি চোখে পড়িবে।
হযরত মোহাম্মদ (আ.) বলিয়াছেন, “আনা মিন নূর আল্লা ওয়া কুল্লে সাইইন মিন নূরি” (অর্থাৎ আমি আল্লাহর নূর হইতে এবং আমার নূর হইতে সমস্ত সৃষ্টি)। কাজেই দেখা যাইতেছে যে, মোহাম্মদী নূর তথা মোহাম্মদ হইতেই সমস্ত সৃষ্টি। সৃষ্টির মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহা মোহাম্মদেরই প্রকাশ বা প্রলম্বন রূপে রূপান্তরিত হইয়া মোহাম্মদ (আ.) ছুটিয়া চলিয়াছেন। আমাদের মধ্যেও মোহাম্মদ (আ.) বীজ রূপে বিরাজিত। মোহাম্মদ অর্থ প্রশংসিত। যিনি নিজেকে নূরে মোহাম্মদীর জ্ঞানে জ্ঞানী হইয়া প্রশংসিত করিতে পারিয়াছেন তিনিই মোহাম্মদ। সমস্ত সৃষ্টিই মোহাম্মদী নূরের বিকাশ।