প্রভা সেন আমার এমনই একজন পাঠিকা। ল্যাংকাশায়ারের প্রবাসিনী এই ভক্ত মেয়েটি জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিতা। তবে মনের কোনে ছিল গভীর অশান্তি। মূলতঃ ইন্টারনেটের গুগলসে আমার ব্লগ, ‘আমি তারাশিস বলছি’ ও ‘Spiritual Message from Tarashis Gangopadhyay’ পড়েই ও আমার লেখনীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। তারপর এক বন্ধুর মাধ্যমে কলকাতা থেকে সংগ্রহ করে আমার ‘দেবলোকের অমৃতসন্ধানে’ গ্রন্থের চারটি পর্ব। বইগুলি পড়তে পড়তেই ও সিদ্ধান্ত নেয় একলাই বদ্রীনাথের ব্রহ্মকপালীতে বাবা-মায়ের পিণ্ডদান করতে যাবে। গুগলসের মাধ্যমে আমার সাথে ও যোগাযোগও করে। ওরই অনুরোধে আমি ওর কেদারবদ্রী দর্শনের প্রোগ্রাম চার্ট করে দিই। তবে সুদূর ল্যাংকাশায়ার থেকে ও একলা হিমালয়ে যাচ্ছে বলে ওকে আমি আমাদের আশ্রমের জাগ্রত গোপালসোনার একটি ফটো পাঠিয়ে দিই এবং ওকে বলি গোপালের কাছে কিচ্ছুটি না চেয়ে শুধু শরণাগতি অবলম্বন করে থাকতে। তাহলে গোপালই ওকে আগলে রাখবে সর্বক্ষণ – কোন বিপদ ওকে স্পর্শও করতে পারবে না।
কিন্তু ২০১৩ সালের জুন মাস এমন সময়ে প্রভা কেদারবদ্রীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল যখন কেদারনাথে প্রকৃতি ধারণ করেছিল রুদ্ররূপ। বিশেষতঃ যেদিন হিমালয়ের সুনামিতে জনাকীর্ণ কেদারনাথ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় সেদিন সেই চরম মুহুর্তে কেদারনাথ মন্দিরেই ছিল প্রভা। ওর চোখের সামনে ভয়াবহ কাদা-জল-পাথরের হড়পা বানে কত মানুষ ভেসে গেছে; আদিগুরু শংকরাচার্য্যের সমাধি, ভারত সেবাশ্রমের অতিথি নিবাস, বিড়লা গেস্ট হাউস সহ কত বিল্ডিং উপড়ে নিয়ে গেছে সেই প্রলংকর স্রোত। কিন্তু গোপাল প্রভার এতটুকুও ক্ষতি হতে দেয়নি। শুধু কি তাই – যেদিন কেদারনাথের বুকে নেমে এসেছে ভয়াবহ ধ্বংসের প্রকোপ সেদিনই গোপালের কৃপায় প্রভা লাভ করেছে দীক্ষা। ইষ্টকৃপা এবং গুরুকৃপা প্রভাকে দিয়েছে সমাধির অভিজ্ঞতা তথা তাকে চিনিয়েছে জীবন থেকে মহাজীবনে উত্তরণের পথ; সেইসাথে তাকে উপলব্ধি করিয়েছে – হিমালয়ের মত মহাতীর্থে কেন নামল এই ভয়াবহ প্রলয়; কাদের দোষে এই মহাতীর্থ পরিণত হল ধ্বংসস্তুপে।
প্রভার সেই দিব্য অভিজ্ঞতার পরশ আমিও লাভ করেছি। গোপাল যে আমাদের বেঁধে দিয়েছে দাদা-বোনের রাখীবন্ধনে। তাই মাঝে-মাঝেই Gmail-এর মাধ্যমে প্রভা হিমালয় থেকেও আমার সাথে কথা বলেছে, নিয়েছে নানা পরামর্শ। আর সেইসাথে শুনিয়েছে তার অভিজ্ঞতার কথা। প্রভার সেই অপার্থিব অভিজ্ঞতা শুনতে শুনতে আমি শিহরিত হয়েছি- মনেপ্রাণে অনুভব করেছি অপূর্ব আনন্দের আবেশ। প্রত্যক্ষ করেছি – গোপালের প্রতি নিষ্কাম শরণাগতি ভক্তকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
আমার তথা আমার প্রিয়জনদের জীবনের সকল আনন্দময় দিব্য অভিজ্ঞতাই আমি আমার আত্মার আত্মীয় পাঠক-পাঠিকাদের সাথে বরাবর ভাগ করে নিই। এবারেও হয়নি ব্যতিক্রম। কেদারনাথে ভয়াবহ মরণের সম্মুখীন হয়েও প্রভার অপার্থিব অভিজ্ঞতা নিয়েই রচিত হল এই গ্রন্থ ‘কেদারনাথে আজো ঘটে অঘটন’।
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা অধ্যাত্ম সাহিত্যের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র ছেলেবেলা থেকেই আধ্যাত্মিক জগতের সাথে যুক্ত। সেই সময় থেকেই সাধক পিতা শ্রীবিপুল কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, গোপাল সাধিকা মাতা শ্রীমতি মীরা গঙ্গোপাধ্যায় এবং অগণিত সিদ্ধ সাধক সাধিকার অমৃতময় সান্নিধ্য তাঁর মননশীল জগৎকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে তোলে। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে মহামণ্ডলেশ্বর শিবানন্দ গিরি মহারাজের পত্রিকা “পাঁচ সিকে পাঁচ আনা”-য় লেখকের প্রথম ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী “দিব্যধাম পুরীতে রথযাত্রা” প্রকাশিত হয়ে বিশেষ সম্মান লাভ করে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনকারী এই সাধক লেখক যোগ ও ভক্তির পথে নিজ মুক্তির সাথে সাথে সকল ভক্তদেরও পরমের পথে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে নিয়োজিত। এই মানবকল্যাণের ব্রতে তাঁর ঐশীকৃপাসম্পন্ন লেখনীই মুখ্য মাধ্যম। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ “মহাসিন্ধুর ওপার থেকে”। তারপর থেকে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর একের পর এক আধ্যাত্মিক মহাগ্রন্থ- দেবলোকের অমৃতসন্ধানে (চার পর্বে সমাপ্ত – যমুনোত্রী-গঙ্গোত্রী-গোমুখ পর্ব, বাসুকীতাল-কালিন্দী খাল-বদ্রীনাথ পর্ব, পঞ্চবদ্রী-পঞ্চপ্রয়াগ-পঞ্চকেদার পর্ব, নেপাল পর্ব), অতীন্দ্রিয় জগতের আহ্বান, বৃন্দাবনে আজো ঘটে অঘটন, জ্ঞানগঞ্জের অমৃতলোকে, কাশীধামে আজো ঘটে অঘটন, শ্যামের মোহন বাঁশী, ক্ষণিক খোঁজে চিরন্তন ( তিন পর্বে সমাপ্ত- মধ্যপ্রদেশ পর্ব, নাসিক-শিরডি-দ্বারকা প্রভাস পর্ব, দক্ষিণ ভারত পর্ব), আজো লীলা করেন সাই, FROM THE WORLD BEYOND DEATH, জন্মান্তর, মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা, অনন্তের জিজ্ঞাসা (৪ খণ্ডে সমাপ্ত), কেদারনাথে আজো ঘটে অঘটন, যেথা রামধনু ওঠে হেসে, আজো সেথা নিত্য লীলা করেন গোরা রায়, জীবন থেকে মহাজীবনের পথে, সাংগ্রীলার গুপ্তযোগী, ব্রজধামে আজো ঘটে অলৌকিক ( তিন পর্বে সমাপ্ত – বৃন্দাবন পর্ব, মথুরা-রাধাকুণ্ড- গোবর্দ্ধন-কাম্যবন পর্ব এবং বর্ষাণা-নন্দগ্রাম-গোকুল মহাবন পর্ব) এবং ভক্তের ভগবান। প্রতিটি গ্রন্থই সাধুসমাজ, পাঠকসমাজ তথা বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকা কর্তৃক বিরাট সমাদর লাভ করে। এই গ্রন্থগুলিতে আজো নিত্য ঘটমান অলৌকিক লীলার উপর রচিত অবিস্মরণীয় সত্যঘটনাগুলি লেখককে যেমন আপামর জনসাধারণের আরো কাছে নিয়ে এসেছে তেমনই পাঠক-পাঠিকাদেরও অবিরত সাহায্য করে চলেছে তাঁদের আত্মোপলব্ধির পথে – জীবন থেকে মহাজীবনে উত্তরণের লক্ষ্যে। এইভাবেই লেখক বর্তমানে জগৎ ও জীবের কল্যাণে আপন ঐশীনির্দিষ্ট ব্রতে একান্তভাবে নিয়োজিত।