কৃষ্ণচূড়া আর পুটুস ফুল: A novel by Ishani Roychaudhuri published by Sristisukh Prokashan LLP

Sristisukh Prokashan LLP
4,0
1 avis
E-book
110
Pages

À propos de cet e-book

কথামুখ


এইমাত্র শেষ হল। ‘আবছা অ্যালবাম’ শেষ পর্ব লেখার কাজ। খসড়া করা ছিল অনেকদিন, ফেলে রেখেছিলাম। তারপর মনে হল, সত্যি কথা বলতে শুরু করলে সে পথের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যেতে হয়। তা না হলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ তুলে নিজের দিকে তাকানো কিছুটা কষ্টকর হয়ে যায়। সব কথা লিখিনি। কারণ সবকিছু লিখতে নেই। তাতে দুঃখ-জ্বালা-অশান্তি বাড়ে। তবে যেটুকু লিখেছি, তাতে মিথ্যে বা বানানো গল্প নেই কোনও। ব্যস, এইটুকুই। এই পর্বের শীর্ষক হিসেবে ‘আবছা অ্যালবাম’ শব্দবন্ধ ব্যবহার হয়নি, কারণ এবার যা কিছু লিখেছি, প্রায় সবটুকুই বৃত্তের বাইরে দাঁড়িয়ে। প্রথম ও উত্তম পুরুষের বকলমে সমান্তরালে দুই নারীর কাহিনি। দুই প্রজন্মের। রাকা আর তুলতুলি। আমি যেভাবে আমার মাকে দেখেছি, চিনেছি এবং বুঝেছি; আর সেইসঙ্গে নিজেকেও। এ লেখায় স্বাভাবিকভাবেই অন্য অনেক চরিত্রদের আনাগোনা আছে। তারা সকলেই ভীষণভাবে রক্তমাংসের মানুষ। সেই সব মানুষের সংস্পর্শে আসা দুই নারীর সমান্তরালে চলতে থাকা জীবন এবং যাপন একটা সময়ে একটা বিন্দুতে এসে মিলে গেছে। এ কাহিনিতে সুখের রাংতামোড়া কিছু কিছু দুঃখকথা আছে, আবার দুঃখের নকশিকাঁথায় ঢাকা সুখের ওম-ও। যে যেমনভাবে দেখবে বা ভাববে। 

আজকাল মনে হয়, জীবন আর কিছুই নয়, দীর্ঘ এক গল্প। যার নির্দিষ্ট কোনও শুরু বা শেষও নেই। যখন যেখান থেকে পড়া বা লেখা আরম্ভ হয়, সেটাই সূচনা; যতটুকুর পরে থেমে যাই, সেখানেই আপাত-উপসংহার। পিছনে কতটা পড়ে রইল, সামনে আর কত বাকি... আসলে জানিই না! তবে এটুকু উপলব্ধি করি, এবার সবকিছু কুড়িয়েবাড়িয়ে জড়ো করে গুটিয়ে ফেলার পালা।

একটা সময় ছিল, যখন সন্ধেতে বা রাতে বিজলিবাতি চলে গেলে মোমবাতি বা লন্ঠন জ্বালানো হত। মোমবাতি আমার বেশি প্রিয় ছিল, কারণ সে আলোয় ঘরের দেওয়ালে অদ্ভুত যত ছায়া পড়ত। আমি নিজেও হাতের কারিকুরিতে সহজ কিছু ছায়ার ছবি তৈরি করতাম। সেসব ছায়ারা যখন নড়াচড়া করত, তাদের কুশীলব করে কল্পনা আর বাস্তব, এই দুই কুরুশকাঠি দিয়ে টুকটাক মনে মনে বোনা যেত হাবিজাবি গল্প।এই মোমবাতি আরও একটি কারণে আমার পছন্দের ছিল। আলো দিত যেমন, কিছু আড়ালও দিত। মোছা মোছা মায়াবী এক অন্ধকারের আড়াল। সেই আড়ালটুকু দিয়ে আগলে রাখা যেত আমার চোখ মুখের কিছু নগ্ন অভিব্যক্তি। অস্বস্তির, ভয়ের, ঘৃণার আর বোধকরি সবচেয়ে বেশি করে... ভালোবাসার আর অসহায় দুর্বলতার। প্রেম আর প্রত্যাখ্যান... আমার জীবনে মোমবাতির আলো এই দুইয়েরই সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে।

এখন তো গোনাগুনতি মোমবাতির পাট বাড়িতে। ওই দীপাবলিতে যেটুকু। তাও আগের মতো তন্বী ফর্সা মেমসাহেব মোমবাতি নয়, এখন সব রংবেরঙের ডিজাইনার মোমবাতি। আলো হয়তো হয়, কিন্তু সে আলোতে আজকাল আর না খুঁজে পাই ছায়া, না পাই আড়াল। অবশ্য থাকলেই বা কী হত? গল্প বোনার মনই তো গেছে নির্বাসনে! অল্পবয়সে পড়াশোনার চাপ, হাতে সময় কম... গল্পরা আসত ঘোড়ায় জিন দিয়ে। বা সুপারফাস্ট মেল ট্রেনে চড়ে, জানলা দিয়ে টফির বাতিল রঙিন মোড়ক আর কমলালেবুর বীজ ওড়াতে ওড়াতে। এখন সময় অঢেল, ভাঙাচোরা যাত্রীবিহীন বাতিল কামরাসমেত একা ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে মুখ চুন করে, তার কোথাও যাবার নেই আর। অস্বস্তি, ভয়, ঘৃণা... এখন আর লুকিয়ে রাখার মতো আড়াল খুঁজতে হয় না। সোচ্চার হতে শিখে গেছি।জীবনই আমাকে শিখিয়েছে হাত ধরে। প্রেম আর প্রত্যাখ্যান? দুইয়েই ক্লান্তি আর অনীহা। এখন উদাসীনতার বর্ম পরে থাকার সময় আমার।

তাও সময়ে অসময়ে লুকোনো সঞ্চয় থেকে বার করে আনি আধভাঙা, ঘাড় মুচড়ে থাকা, সলতে দেওয়া, লিকলিকে সরু, মান্ধাতার আমলের মোমবাতি। সহজে জ্বলতে চায় না। সে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। অনেকগুলো দেশলাই কাঠি খরচ। সন্তর্পণে জ্বালাই। দু-হাতে ঘিরে রাখি ক্ষীণতনু শিখাটিকে। এত দুর্বল, ভীতু সে শিখা যে ছায়ার খেলা দেখাতে বলা বৃথা। তবু জ্বালি। নামমাত্র আলো হয়, কী হয় না... তবুও। 

কারণ নিজের মনের মুখের হদিশ পেতে ওটুকু আলো লাগে!


ওটুকুই আলো লাগে।


ঈশানী রায়চৌধুরী 


Notes et avis

4,0
1 avis

Donner une note à cet e-book

Dites-nous ce que vous en pensez.

Informations sur la lecture

Smartphones et tablettes
Installez l'application Google Play Livres pour Android et iPad ou iPhone. Elle se synchronise automatiquement avec votre compte et vous permet de lire des livres en ligne ou hors connexion, où que vous soyez.
Ordinateurs portables et de bureau
Vous pouvez écouter les livres audio achetés sur Google Play à l'aide du navigateur Web de votre ordinateur.
Liseuses et autres appareils
Pour lire sur des appareils e-Ink, comme les liseuses Kobo, vous devez télécharger un fichier et le transférer sur l'appareil en question. Suivez les instructions détaillées du Centre d'aide pour transférer les fichiers sur les liseuses compatibles.