রাজধানীতে তুলকালাম: A Pastiche Dedicated to Feluda by Prabirendra Chattopadhyay published by Sristisukh Prokashan LLP

Sristisukh Prokashan LLP
4.8
14 reviews
Ebook
52
Pages

About this ebook

মুখবন্ধ


১৯২৬ সালের ষোলোই ফেব্রুয়ারি ডক্টর জন হার্বার্ট ওয়াটসন তাঁর হ্যাম্পশায়ারের বাড়িতে পড়ে গেছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে এই শারীরিক আঘাত তিনি সহ্য করতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ব্যাঙ্কের লকার থেকে পাওয়া যায় একশ চৌষট্টি পাতার একটি পাণ্ডুলিপি। সেই লেখা যাঁরাই পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, বিশ্বাসই করতে পারেননি যে শার্লক হোমসের জীবনে এরকম একটি রহস্য লুকিয়ে ছিল। অনেকে কানাঘুষো শুনেছিলেন, শার্লক হোমস নাকি লন্ডনের কুখ্যাত খুনী জ্যাক দ্য রিপারের রহস্য সমাধান করেছিলেন, এবং এই লেখা মূলত সেই গোপনীয় কেসটির বিবরণ। কানাঘুষোতে এও শোনা যাচ্ছিল যে, হোমসের চিরশত্রু প্রফেসর মরিয়র্টি এবং জ্যাকের কোনও একটা সম্পর্ক থেকে থাকতে পারে, কিন্তু পাণ্ডুলিপিটি যে বাস্তবকে তুলে ধরল সবার সামনে তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই।  

প্রফেসর মরিয়র্টি আসলে হোমস নিজেই, উন্মাদনার বশে হোমস নিজেই ঘটিয়েছেন একের পর এক অপরাধ।   

এই পর্যন্ত পড়ে যদি হোমসপ্রেমীরা ভ্রূ কুঁচকে ফেলেন, তাহলে দোষ দেওয়া যায় না। কন্যান ডয়েল যে কটা হোমসের গল্প লিখে গেছেন, তার কোনওটাতেই হোমস বা ওয়াটসন কত বছর অবধি বেঁচে ছিলেন তার কোনও ধারণা পাওয়া যায় না। এই গল্পগুলির একটাতেও হোমসের সঙ্গে জ্যাক দ্য রিপারের মোকাবিলা হয়নি। অথচ আন্তর্জালে ‘হোমস বনাম জ্যাক দ্য রিপার’ লিখে তন্নতন্ন করে খুঁজুন, অন্তত গোটা সতেরো গল্পের সন্ধান পাবেন। রহস্যটা কী? বুদ্ধিমান পাঠক, বুঝতেই পারছেন এ রহস্য এমন কিছু জোরদার নয়। এই সতেরোটি গল্পের কোনওটিই কন্যান ডয়েল নিজে লিখে যাননি, এগুলো সবই শার্লক হোমসের ভক্তদের লেখা। সেসব ভক্তদের মধ্যে যেমন অনামী মানুষ আছেন, তেমনই আছেন প্রথিতযশা লেখকরাও। ওপরের অনুচ্ছেদে যে গল্পটির কথা বলা হয়েছে, সেটি লিখেছিলেন মাইকেল ডিবডিন। ডিবডিন নিজে লেখক, রহস্যরোমাঞ্চ জঁরে তাঁর নিজেরই বিস্তর নাম। তাঁর লেখকজীবনের শুরু কিন্তু শার্লক হোমসের ফ্যান ফিকশন দিয়েই, যার নাম ছিল ‘দ্য লাস্ট শার্লক হোমস স্টোরি’। যদিও ডিবডিন নিজে বা তাঁর প্রকাশক বা পাঠক কেউই একে নিছক ফ্যান ফিকশন বলবেন না, এহেন লেখার জন্য বরাদ্দ আছে অন্য একটি নাম – প্যাস্টিশ (Pastiche)। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে ফ্যান ফিকশন এবং প্যাস্টিশের মধ্যে কী তফাৎ? প্যাস্টিশ লিখতে হলে লেখকের অরিজিন্যাল স্টাইলটি মেনে চলতেই হবে, ফ্যান ফিকশন লিখিয়েদের থেকে সেরকম কোনও চাহিদা থাকে না। বুঝতেই পারছেন, একটি সফল প্যাস্টিশ লেখার জন্য গবেষণা করা অত্যন্ত জরুরি। পাঠক হয়ে যখন তরতর করে পড়ে চলেছেন তখন এক কথা, আর যখন লেখকের জুতোয় পা গলিয়ে তাঁকে যথাযথভাবে অনুকরণ করার চেষ্টা করছেন, সে আরেক কথা। কাজটি বলতে গেলে অপরিসীম কঠিন। হয়তো সে কারণেই ‘ফ্যান ফিকশন’ শব্দবন্ধটি একটু তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই ব্যবহৃত হয়, ‘প্যাস্টিশ’ শব্দটি কিন্তু বনেদী ঘরানার। অবশ্য লেখক বা প্রকাশক নিজে বললেই তো হবে না, একটা ফ্যান ফিকশন প্যাস্টিশে উন্নীত হয়েছে কিনা তা বলবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঠকরাই। নতুন প্লটের সঙ্গে পুরনো স্টাইল মানিয়ে গেল কিনা, সে বিচারের দায়িত্বও নিতান্তই পাঠকের।   

শুধু কি শার্লক হোমস? এরকিউল পোয়ারো থেকে শুরু করে জেমস বন্ড, কাকে নিয়ে যে প্যাস্টিশ লেখা হয়নি! এমনকী এই সেদিনের চরিত্র হ্যারি পটার বা লিসবেথ সালান্ডাররাও (স্টিগ লারসনের ‘মিলেনিয়াম সিরিজ’ খ্যাত) বাদ পড়েননি। প্যাস্টিশ বা ফ্যান ফিকশন প্রায় অধিকাংশ সময়েই লেখা হয়েছে আদি লেখক বা লেখিকার মৃত্যুর পর, তবে কখনও সখনও তার ব্যতিক্রমও ঘটেছে। হ্যারি পটারের অগুনতি ভক্ত যেমন সিরিজের শেষ বইটি লিখে বেরনোর আগে থেকেই নিজেরাই লিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। লেখিকা জে কে রাউলিং অবশ্য সমানে ভক্তদের প্রশ্রয়ই দিয়ে গেছেন, হ্যারি পটার সিরিজের অন্যতম চরিত্র অ্যালবাস ডাম্বলডোরকে সমকামী ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও রাউলিং-এর অনুপ্রেরণা ছিল তাঁরই ভক্তদের লেখা ফ্যান ফিকশন।  

বাংলা সাহিত্যে প্যাস্টিশ নেই বললেই চলে, যা আছে তা মূলত প্যারডি (বাংলায় যাকে বলে লালিকা)। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের জাপানি গোয়েন্দা হুকাকাশির প্যারডি লিখেছিলেন স্বয়ং শিবরাম চক্রবর্তী; শিবরামের গোয়েন্দার নাম ছিল কল্কেকাশি। শিবরাম এও জানিয়েছিলেন যে, কল্কেকাশি আদতে হুকাকাশির ভায়রাভাই। শিবরামের লেখার গুণে কল্কেকাশি বোধ হয় হুকাকাশির থেকেও জনপ্রিয় হয়েছিল। শিবরামের অবিস্মরণীয় দুই চরিত্র হর্ষবর্ধন এবং গোবর্ধনের সঙ্গেও কল্কেকাশির দেখা হয়েছিল ‘রহস্যময় হর্ষবর্ধন’ গল্পে। শিবরামের মতন প্যারডি সিরিজ বোধ হয় আর কেউই লেখেননি, অধিকাংশ সময় শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে একটিমাত্র গল্পেই। যেমন রাজশেখর বসুর লেখা ‘নীলতারা’। ১৯৫৪ সালে লেখা এই ছোটগল্পটিতে শার্লক হোমস এবং ওয়াটসন এসে হাজির হয়েছিলেন রাখাল মুস্তৌফীর বেহালার বাড়িতে, সে গল্পে যদিও হোমস গোয়েন্দাগিরির থেকে বেশি করেছেন ঘটকালি। হোমস স্বনামে না এলেও বাঙালি সেজে অবশ্য তার অনেক আগেই আমাদের তল্লাটে ঢুকে পড়েছেন। পাঁচকড়ি দে-র গোয়েন্দা গোবিন্দরাম এবং তাঁর সহকারী ডাক্তার বসু যে হোমস এবং ওয়াটসন, সে কথা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। লাহোরে আলাপ হওয়ার মুহূর্তটিতেই গোবিন্দরাম ডাক্তার বসুর দিকে এক ঝলক দেখেই বলে দিয়েছিলেন যে তিনি কাবুল ফেরত। বলা বাহুল্য যে ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট’-এ ব্রিটিশ গোয়েন্দাপ্রবরটিও সঠিক ডিডাকশনে বলে দিয়েছিলেন ওয়াটসন আফগান যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। 

বাঙালি গোয়েন্দাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন ব্যোমকেশ এবং ফেলুদা। বাংলা সাহিত্যের গবেষক সৌরভ দত্ত তাঁর ব্লগে (http://blogus-abogusblog.blogspot.com.tr/2016/09/Atithi-Shawmaabesh-Kolkekashi-Parashar-Byomkesh.html) জানিয়েছেন প্রেমেন্দ্র মিত্রর গল্প ‘তিনটি শিকার’-এ ব্যোমকেশকে অতিথি গোয়েন্দার ভূমিকার দেখা গেছিল। এছাড়া পূর্ণেন্দু পত্রী ব্যোমকেশের ছেলেকে নিয়ে লিখেছিলেন ‘জুনিয়র ব্যোমকেশ’-এর গল্পগুলি, কিন্তু ব্যোমকেশকে নিয়ে সম্পূর্ণ প্যাস্টিশ বোধ হয় লেখা হয়নি। ফেলুদাকে নিয়েও প্যাস্টিশ নেই, তবে ফ্যান ফিকশন নয় নয় করে আছে বেশ কিছুই। দুই বাংলা থেকে একটি করে উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০১৫-র অক্টোবরে অনলাইনে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশি লেখক মাসুদ সরকার রানার ফ্যান ফিকশন ‘কুমিল্লায় ফেলুদা’, আর তারও চার বছর আগে কলকাতার সৌমিত্র ব্যানার্জী এবং মিঠু ঘোষাল যৌথ উদ্যোগে লিখেছিলেন ‘কেলুকা রিটার্নস’ (প্রকাশক – বইপোকা)। মাসুদের গল্পে ফেলুদা, তোপসে, জটায়ুর নাম অপরিবর্তিত থাকলেও সৌমিত্রর লেখায় ফেলুদা হয়েছে কেলুকা, তোপসের সঙ্গে মিলিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে পারশে (মেছো গন্ধটুকুও থাকল), আর লালমোহনবাবু হয়েছেন নীলমাধববাবু। এমনকী নীলমাধবের একটি ছদ্মনামও আছে, গরুড় (যদিও বইতে বানান গড়ুর)। এই দুটি লেখাই অবশ্য নিছক ফ্যান ফিকশন, প্যাস্টিশ আর হয়ে উঠতে পারেনি। তার প্রধান কারণ সত্যজিৎ-এর লেখার স্টাইল বা এলিগ্যান্স কোনওটিই এসব লেখায় বিন্দুমাত্রও ধরা পড়েনি।  

ফেলুদার প্রথম গল্পের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘টগবগ’ পত্রিকার উৎসব সংখ্যার জন্য লিখেছিলাম ফেলুদার নতুন গল্প ‘রাজধানীতে তুলকালাম’। সেই লেখা পড়ে বন্ধুবর এবং সৃষ্টিসুখের কর্ণধার রোহণ কুদ্দুস লেখাটিকে বই আকারে বার করতে চাইলেন। আর প্রায় সে সময়েই খেয়াল পড়ল ব্যোমকেশের গল্প নিয়ে প্রস্তুত প্রথম চলচ্চিত্র ‘চিড়িয়াখানা’-র পঞ্চাশ বছর পূর্তিও হবে ২০১৭-তে। সে কথা মাথায় রেখেই লেখা হল ‘গরল তমসা’। এক মলাটে ফেলুদা এবং ব্যোমকেশকে ধরতে চাওয়ার মধ্যে অনেকেই দুঃসাহস দেখবেন, হয়তো স্পর্ধাও, তবে প্রকাশক এবং লেখকের তরফ থেকে বলতে পারি, এই দুই চরিত্র এবং তাঁদের স্রষ্টাদের প্রতি নিখাদ ভালোবাসাই আমাদের সাহস জুগিয়েছে। হয়তো এই নিখাদ ভালোবাসা থেকেই টগবগের একাধিক পাঠকও জানিয়েছিলেন ‘রাজধানীতে তুলকালাম’ তাঁদের মন ছুঁয়ে গেছে, কৃতজ্ঞতা থাকল তাঁদের প্রতি। নিখাদ ভালোবাসার টানে বাঁধা পড়েছিলেন আরও একজন, তিনি শিল্পী এবং বন্ধু অভীক কুমার মৈত্র। অভীকের করা প্রচ্ছদ এবং অলঙ্করণ বাদ দিয়ে এ বই দাঁড়ায় না। আইডিয়া জেনারেশন থেকে শুরু করে বাকি প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর কত রাত্রি যে বিনিদ্র কেটেছে তার সাক্ষী থাকল ফেসবুক মেসেঞ্জার। কিন্তু রোহণ এবং আমি জানি, অভীক সে নিয়ে কোনওদিনই অভিযোগ করবেন না, কারণ তাঁর মতন ফ্যানবয় ফেলুদা এবং ব্যোমকেশের ভাগ্যেও চট করে জুটবে না।  


প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

ইস্তানবুল, নভেম্বর ২০১৬


Ratings and reviews

4.8
14 reviews
Bristi Chakraborty
October 14, 2020
very good book
2 people found this review helpful
Did you find this helpful?
SHYAMAPRASAD SARKAR
May 1, 2021
অনন্য
1 person found this review helpful
Did you find this helpful?
Argha Bhattacharjee cl-10 sec-B roll-32
December 7, 2022
super
Did you find this helpful?

Rate this ebook

Tell us what you think.

Reading information

Smartphones and tablets
Install the Google Play Books app for Android and iPad/iPhone. It syncs automatically with your account and allows you to read online or offline wherever you are.
Laptops and computers
You can listen to audiobooks purchased on Google Play using your computer's web browser.
eReaders and other devices
To read on e-ink devices like Kobo eReaders, you'll need to download a file and transfer it to your device. Follow the detailed Help Center instructions to transfer the files to supported eReaders.