মহর্ষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণ হল ভারতের আদি মহাকাব্য। আর বাল্মীকি হলেন আদিকবি। জনমানসে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-থাকা কাহিনিগুলিকে একত্রিত করে সর্বপ্রথম তিনিই সপ্তকাণ্ড রামায়ণ রচনা করেন। আদিকবি বাল্মীকির মহান কীর্তি ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির আকরস্বরূপ। পরবর্তীকালে বাল্মীকি রামায়ণের সাহিত্যসুধা জনসাধারণের হৃদয়-রাজ্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম হন বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার রামায়ণ রচয়িতাগণ। তেমনি একজন হলেন কৃত্তিবাস ওঝা, যিনি বাংলা ভাষায় রামায়ণের ভাবানুবাদ করে অনুপম সাহিত্যসুধাদানে সমগ্র বাঙালি জাতিকে ধন্য করেছিলেন। সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে, বিশ্বাসে, ভালোবাসায় খুঁজে পেল কৃত্তিবাসি রামায়ণকে। কিন্তু বাংলা রামায়ণ কেবলমাত্র কৃত্তিবাসি রামায়ণ নয়। এ ছাড়াও অসংখ্য বাংলা রামায়ণ ও রামায়ণকারের সন্ধান পাওয়া যায়। পঞ্চদশ শতকের কবি কৃত্তিবাসের কৃত্তিবাসি রামায়ণের পাশাপাশি ষোড়শ শতকে কবি চন্দ্রাবতীর চন্দ্রাবতী রামায়ণ, সপ্তদশ শতকে কবিচন্দ্র শংকর চক্রবর্তীর বিষ্ণুপুরি রামায়ণ ও অষ্টাদশ শতকের কবি জগৎরাম রায়ের জগদ্রামি রামায়ণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কাহিনিগত, ভাবনার অভিমুখ অনুযায়ী এরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত স্বতন্ত্র। যুগপ্রবণতা অনুসারে মানুষের ভাবনায় এবং সাহিত্যের ভাববিভঙ্গে পরিবর্তন দেখা যায়। এই বদলের পশ্চাতে তৎকালীন রাজানুগ্রহ, ধর্মীয় বাতাবরণ, লিঙ্গবৈষম্য, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সমকালগত, কাহিনিগত, রচনাগত এবং ধর্মীয় চেতনার আঙ্গিকে বাংলা রামায়ণের পূর্ণাঙ্গ তুলনামূলক পর্যালোচনা এই বইটিতে করা হয়েছে।